প্রজাতন্ত্র দিবসে মাননীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মার বক্তব্য বিবৃতি ও বক্তৃতা

প্রজাতন্ত্র দিবসে মাননীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মার বক্তব্য

সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, ভদ্রমহিলাগণ ও ভদ্রমহোদয়গণ, শুভসন্ধ্যা!

১. আমার স্ত্রী মনু ও ভারতীয় হাই কমিশন পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উদ্যাপনের জন্য আজ আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

২. এটা সত্যিই আমাদের জন্য একটি স্মরণীয় উপলক্ষ্য। এই প্রথম আমি আপনাদের সঙ্গে এই দিনটি উদ্যাপন করছি।

৩. বিভিন্ন কারণে আজকের অনুষ্ঠানটি বিশেষ। আপনারা জানেন যে, এটি আমাদের প্রজাতন্ত্র দিবসের ৭৪তম বার্ষিকী এবং আমরা আমাদের প্রজাতন্ত্রের ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন শুরু করছি।

৪. একই সঙ্গে এই বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫১তম বার্ষিকী। এখন পর্যন্ত অতিক্রান্ত আমাদের যাত্রাপথের দিকে ফিরে তাকানোর এবং ভবিষ্যতের জন্য সংকল্প করার এই ধরনের মাইলফলকসমূহ সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য হয়ে থাকে।

৫. ভারতের জন্য, বিগত ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ছিল দারিদ্র্যের কবল থেকে আজকের একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হওয়ার জন্য এক অসাধারণ যাত্রা, যা মানবতার অগ্রগতিতে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহের সমাধান প্রস্তাব করছে। ভারতের রূপান্তরের মাত্রা বাংলাদেশসহ আমাদের অংশীদারদের জন্য সক্ষমতা তৈরি ও সুযোগ সৃষ্টি করছে।

৬. ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে, গত ৫০ বছর ছিল একতার একটি অসাধারণ যাত্রা। তারা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যৌথ আত্মত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এবং জাতীয় উন্নয়নে তাদের সাধনায় একে অপরকে সমর্থন করেছে।

৭. দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ এবং দেশদুটির মধ্যে অন্য অগণিত মিলের মধ্যে গ্রথিত রয়েছে। এটির ভিত্তি হলো সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা, বোঝাপড়া ও সর্বব্যাপী অংশীদারত্ব, যা এখন কৌশলগত অংশীদারত্বকে অতিক্রম করে গেছে।

৮. স্থল সীমানা চুক্তি ও সমুদ্রসীমাসহ বিভিন্ন দীর্ঘ অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে আমাদের সক্ষমতা নির্দেশ করে যে আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি। এটি উত্তম প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বের কাছে একটি অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে। আমাদের বহুমাত্রিক সহযোগিতা পর্যটন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো চিরাচরিত খাত থেকে শুরু করে পারমাণবিক বিজ্ঞান, মহাকাশ ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো অগ্রসর প্রযুক্তি পর্যন্ত বিস্তৃত। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সম্মিলিত সমৃদ্ধি হলো আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদর্শ।

৯. ভারত ও বাংলাদেশ আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ফলপ্রসূ বছরের দিকে ফিরে তাকাতে পারে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল ভারত সফর আমাদের অংশীদারত্বকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নাগরিকদের অর্থনৈতিক মঙ্গলের প্রসার ঘটানোসহ বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্যসমূহের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ স্থাপন করতে, উভয় দেশের মধ্যে ট্রেন পরিষেবাসমূহের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে, উন্নয়ন অংশীদারত্ব একীকরণ করতে ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে উভয় সরকারই বিগত বছরে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বন্ধুগণ,

১০. বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো শক্তি হলো এর জনগণ। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল উপাদান হলো মানুষে-মানুষে সংযোগের প্রসার ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে জানাচ্ছি যে আমরা ২০২২ সালে ভারত গমনের জন্য ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে ভিসা দিয়েছি। আমরা আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুদের জন্য ভারত ভ্রমণ সহজ করার প্রয়াসে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

১১. ভারত সরকার ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রামের অধীনে ভারতে ৮০০০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সম্মানজনক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)-সহ ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ দিতে প্রতিবছর প্রায় ১৮০টি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) স্কলারশিপ প্রদান করা হচ্ছে।

১২. ভারত ও বাংলাদেশের রয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করা ও জয়লাভের যৌথ উত্তরাধিকার। আধুনিক ইতিহাসে এটি অনন্য উদাহরণ, যেখানে দুটি জাতির মানুষ একটি সমন্বিত শক্তি হিসেবে যুদ্ধ করেছে এবং একটি অভিন্ন শত্রুকে পরাজিত করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্প ও মুক্তিযোদ্ধা স্বাস্থ্য প্রকল্পের মতো বিভিন্ন কল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

১৩. সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, আপনারা জানেন, ভারত ২০২৩ সালে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সি এমন এক সময়ে সমাগত যখন বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম কোভিড-১৯ অতিমারির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার সংগ্রাম করছে। তবে ভারত এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে। জি২০ প্রেসিডেন্সি আমাদের এজেন্ডা নির্ধারণ ও এই কঠিন সময়ে সামষ্টিক কল্যাণের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিষ্পেষণকারী কিছু বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের নেতৃত্বের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি। আমরা আনন্দিত যে আমাদের আমন্ত্রণে, বাংলাদেশ অতিথি দেশ হিসেবে এই আলোচনাসমূহে যোগদান করবে।

১৪. সমাপ্তির আগে, আমি আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে তাদের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে, আজকের আয়োজনে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। আজ সন্ধ্যার এই উদ্যাপনে আমাদের সঙ্গে যোগদান করতে আমি আপনাকে স্বাগত জানাই।

১৫. আমি বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই: আমার সবচেয়ে বড়ো শক্তি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি, সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা আমি তাদেরকে খুব বেশি ভালোবাসি। সবাইকে ধন্যবাদ!

ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক!

জয় হিন্দ!