ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২২ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য
বিবৃতি ও বক্তৃতা

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২২ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২২ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য

 

জনাব এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জনাব কে এম খালিদ, মাননীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

জনাব শাহরিয়ার আলম, মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

জনাব আহমেদ মুস্তফা জামাল, পরিচালক, ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

   

বন্ধুগণ,

শুরুতেই সবাইকে সাকরাইনের শুভেচ্ছা। গতকাল ছিল পৌষমাসের শেষ দিন যা ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন বা সংক্রান্তি নামে পরিচিত। নতুন কিছু শুরুর জন্য একটি শুভ দিন, তাই আমি আনন্দিত যে, আজ আমরা ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আরেকটি পর্ব উদ্বোধন করছি।

 

১৯৭৭ সাল থেকে রেইনবো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি বিশ্বের চলচ্চিত্র জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমি উৎসব কমিটি এবং পরিচালক, আমাদের বন্ধু আহমেদ মুস্তফা জামালকে অভিনন্দন জানাই, বিশেষ করে গত দুই বছরে, কোভিড মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঢাকায় এই অনুষ্ঠান আয়োজনে তার সমস্ত প্রচেষ্টার জন্য।

 

জামাল ভাই এবং উৎসব কমিটির অন্যরা দু’টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বোঝেন – প্রথমটি হল যা জঁ-লুক গদার বলেছিলেন, “সিনেমা হল সেকেন্ডে ২৪ ফ্রেমে চিত্রিত সত্য”। দ্বিতীয়টি, দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রিকেট, রাজনীতি এবং চলচ্চিত্র দৈনন্দিন জীবনের প্রধান বিষয়। এগুলো আমাদের সংস্কৃতি বা আধুনিক যুগে আমাদের অভ্যাস থেকে অবিচ্ছেদ্য।

 

তাই ভালো চলচ্চিত্রের প্রচার এবং আমাদের শিল্পীদের মধ্যে সংলাপ সাংস্কৃতিক বিকাশের একটি অপরিহার্য অংশ। বিশেষত যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, এই সংলাপ মানুষের জন্য উন্মুক্ত এবং সবাই এখানে সারাবিশ্বের মানুষের কন্ঠ, ছবি ও কাহিনী দেখতে পারবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হলো ঢাকায় বিশ্ব দেখার জানালা যার মাধ্যমে চলচ্চিত্রের বিশ্ব ঢাকায় পৌঁছে যায়।

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ৩৪টি ভারতীয় চলচ্চিত্র এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের ৩০ জনের বেশি শিল্পীকে নিয়ে আসার জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আমি তাদের বাংলাদেশে স্বাগত জানাই, যেখানে দর্শকরা বিশ্বের বিচক্ষণ দর্শকদের সমতুল্য।  বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে কারণ তা বাংলাদেশের গল্প অনন্য এবং গভীর সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। খুব সম্প্রতি বাংলাদেশ "রেহানা মরিয়ম নূর" চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জন করেছে। এরকম আরেকটি উদাহরণ হল, গত বছর গোয়ায় ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে  বাংলাদেশ ছিল কেন্দ্রবিন্দু, কারণ ছিল এখান থেকে যাওয়া বহু নতুন প্রতিভা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী।  বাংলাদেশী চলচ্চিত্র "পায়ের তলায় মাটি নাই"  ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে  গোল্ডেন পিকক পুরস্কারের একটি প্রধান প্রতিযোগী ছিল। এর সবই চমৎকার কারণ খেলাধুলার মতোই, চলচ্চিত্র শিল্প বিশ্বব্যাপী প্রচারের মাধ্যমে বিকশিত হয়।

 

এই প্রেক্ষাপটে, আমি আশা করি এখানকার কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়ার জন্য আমাদের অনুরোধটি বিবেচনা করবে। মহান চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেনিস ভিলেনুভ বলেছিলেন যে "চলচ্চিত্র একটি শিল্প যা সীমানা অতিক্রম করার জন্যই তৈরি হয়েছে"। আমরা অভিন্ন ও অনুরূপ প্রশংসামূলক শৈল্পিক সংবেদনশীলতা এবং আমাদের শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সঙ্গীতশিল্পে  সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাসের কারণে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরও চলচ্চিত্র প্রকাশের অনুমতি দিলে তা আমাদের উভয়দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে সাহায্য করবে।  শৈল্পিক দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি থিয়েটার থেকে অর্থায়ন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বর্ধিত প্রবাহের মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ হবে। বিখ্যাত পরিচালক শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বিশেষ যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র প্রায় শেষের দিকে। এটি শুধু আমাদের দুই দেশের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য নির্মিত একটি চলচ্চিত্র হবে। আমি নিশ্চিত যে আগামীতে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের মতোই দুই দেশের চলচ্চিত্রগুলিও একে অপরের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হবে।

এই প্রসঙ্গে আমি আবারও বলতে চাই যে, আমরা স্ক্রিপ্ট লেখা থেকে শুরু করে সম্পাদনা, স্পেশাল ইফেক্ট, সিনেমাটোগ্রাফিসহ অন্যান্য বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের সমস্ত দিকে অংশীদারিত্বের হাত বাড়াতে প্রস্তুত।

 

অনুরাগ কশ্যপ বলেছিলেন, "চলচ্চিত্র নায়ক এবং খলনায়কের চেয়ে অনেক বেশি কিছু"। আমি তার কথার পুনরাবৃত্তি করে শেষ করছি। তিনি ঠিকই বলেছেন, কারণ চলচ্চিত্র মূলত গল্প বলার বিষয়। দর্শক হিসেবে, আমরা আগামী ৮ দিনে বিনোদিত, শিক্ষিত এবং চিন্তা করতে বাধ্য হওয়ার অপেক্ষায় আছি।

উৎসবের আয়োজকদের আবারও ধন্যবাদ। আমি উৎসবের সাফল্য এবং দর্শকদের একটি নিরাপদ এবং উপভোগ্য অভিজ্ঞতা কামনা করি। পুরষ্কারের জন্য মনোনীত প্রতিনিধিদের জন্যও শুভকামনা।

 

আপনাদের অভিজ্ঞতা উপভোগ্য হোক, অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হোক!