সিএসআইআর ও বিসিএসআইআর-এর যৌথ বিজ্ঞান সিম্পোজিয়ামে হাই কমিশনারের বক্তব্য বিবৃতি ও বক্তৃতা

সিএসআইআর ও বিসিএসআইআর-এর যৌথ বিজ্ঞান সিম্পোজিয়ামে হাই কমিশনারের বক্তব্য

সিএসআইআর বিসিএসআইআর-এর যৌথ বিজ্ঞান সিম্পোজিয়ামে হাই কমিশনারের বক্তব্য

বাংলাদেশের মাননীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান;

সিনিয়র সচিব, জনাব জিয়াউল হাসান;

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . মো: আফতাব আলী শেখ;

সিএসআইআর, ভারতের বিশিষ্ট প্রতিনিধিদল;

আজকে এখানে একত্রিত হওয়া সকল বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও অতিথিবৃন্দ;

ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ,

শুভ সকাল, আপনাদের সবাইকে সুন্দর একটি সকালের শুভেচ্ছা!

১.বিসিএসআইআর ও সিএসআইআর-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিজ্ঞান সিম্পোজিয়ামে যোগ দিতে বিশিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের মাঝে আজ বিসিএসআইআর-এ উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি বিসিএসআইআর-এর চেয়ারম্যান ড. আফতাবকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে আমন্ত্রণ জানাতে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগের জন্য।

২.একজন প্রকৌশলী থেকে কূটনীতিক হওয়াতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি সবসময়ই আমার দুর্বলতা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের উন্নয়ন অংশীদারিত্ব এবং জন-কেন্দ্রিক পারস্পরিক উপকারী সম্পৃক্ততাকে উন্নীত করার জন্য কূটনীতির একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হলো এস অ্যান্ড টি সহযোগিতা।

৩.বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির সারিতে যোগদান করতে আগ্রহী বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলির জন্য, একে অপরের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার ওপর নির্মিত স্ব-নির্ভর বৈজ্ঞানিক বাস্তুতন্ত্রের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে সেটাকে অগ্রসর করার ব্যাপক মূল্য প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই সিম্পোজিয়ামটি সেই লক্ষ্য অভিমুখে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

৪.বৈজ্ঞানিক ধারাকে উত্সাহিত করার এবং মানবজাতির বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে অবদান রাখার একটি শক্তিশালী ঐতিহ্যের দেশ হিসাবে, আমাদের বিজ্ঞানীদেরকে যৌথভাবে গবেষণা ও সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে দেখাটা আনন্দদায়ক।

৫.২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর চলাকালে সিএসআইআর ও বিসিএসআইআর-এর মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটারই অনুগামী হিসেবে আমি এই সিম্পোজিয়াম আয়োজনের জন্য তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। ভারতীয় হাই কমিশনের পক্ষ থেকে, আমরা সেই এমওইউ-তে থাকা লক্ষ্যসমূহকে সহযোগিতার বাস্তব পদক্ষেপে রুপান্তর করার উদ্দেশ্যে আপনাদের সকল প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পেরে খুশি হবো।

৬.সমানভাবে লক্ষণীয় যে, সিএসআইআর ও বিসিএসআইআর এই সিম্পোজিয়ামের মূলসুরকে “টেকসই উন্নয়নের জন্য উন্নত কার্যকরী এবং স্মার্ট উপাদান” হিসেবে বেছে নিয়েছে। আজকের আলোচ্য বিষয়সমূহের সার-সংক্ষেপ এই যে, আমাদের ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিশ্রুতি শিক্ষামূলক হওয়া উচিত, তা নবায়নযোগ্য শক্তিবিষয়ক প্রযুক্তির জন্য দরকারি উপকরণসমূহের ওপর গবেষণাই হোক বা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করা যায়, এমন নতুন উদ্ভাবন ও প্রক্রিয়াসমূহের বিকাশই হোক।

বন্ধুগণ,

৭.আমাদের যৌথ সমৃদ্ধি রূপায়নে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের গুরুত্বকে উড়িয়ে দেওয়া যায়না। আমাদের বিজ্ঞানীরা স্বনির্ভরতা, দারিদ্র্য বিমোচন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বর্ধিত উত্পাদনশীলতা এবং সাধারণ মানুষের জন্য উন্নত স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের বৃহত্তর জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার নিমিত্তে প্রচেষ্টার চূড়ান্তে রয়েছে। সুখ্যাতি থেকে দূরে, আপনার কঠোর চেষ্টা ও পরিশ্রম ধীরে ধীরে হলেও নিশ্চিতভাবেই সমাধানের পথ প্রশস্ত করে যার সুবিধাসমূহ সামাজিক ও মানবিক বাধাকে অতিক্রম করে যায়।

৮.উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবন, সামাজিক প্রতিকূলতাসমূহ মোকাবিলা করে এমন সমাধান অন্বেষণ এবং উন্নয়নমূলক আকাঙ্খা পূরণকারী ধারণা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এস অ্যান্ড টি সহযোগিতার অনন্য মূল্য রয়েছে।

৯.আমাদের উভয় দেশই বিশ্বাস করে, মৌলিক বিজ্ঞান এবং গবেষণা ও উন্নয়নে আমাদের বিনিয়োগ আজ ফলপ্রসূ হতে চলেছে যা আগামীতে বিশ্বের প্রথম সারির সমাজে আমাদের রূপান্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, যা আমরা হতে চাই। এই রূপকল্পকে বাস্তবে পরিণত করতে সিএসআইআর ও বিসিএসআইআর-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

১০.ভারত আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার শীর্ষে রয়েছে, যার মাঝে অনেকগুলো বাকি বিশ্বের কাছেও নতুন। আমাদের বিজ্ঞানীরা ব্যাটারি, হাইড্রোজেন ও জ্বালানি সেল, নতুন শক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কার্বনভিত্তিক জ্বালানির মতো অত্যাধুনিক প্রয়োগক্ষেত্রসমূহ নিয়ে অধ্যয়ন করছেন যেখানে আমরা অন্যান্য উন্নত দেশের সাথে মৈত্রীবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, এবং সম্ভবত কিছু ক্ষেত্রে তাদের থেকেও এগিয়ে রয়েছি। সেই সকল খাতের এই ধরনের নতুন প্রযুক্তিসমূহ তাই বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগের প্রতিনিধিত্ব করে। এবং এটি বাংলাদেশের মতো বন্ধুদের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার নতুন সুযোগ উন্মোচন করতে পারে।

১১.আমি আরও উল্লেখ করতে চাই যে, ২০২৩ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর কারণ ভারত এই বছর জি২০-র প্রেসিডেন্সিতে রয়েছে। আমরা আনন্দিত ও ভাগ্যবান যে ভারতের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে জি-২০ আলোচনাসমূহে যোগদান করেছে এবং সারা বিশ্বকে তার কণ্ঠস্বর শোনাচ্ছে।

১২.বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জি২০ ট্র্যাক হলো জি২০ রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ইনিশিয়েটিভ গ্যাদারিং, আরআইআইজি। এই বছর ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সির সময় আরআইআইজি-র মূলসুর হলো একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজের জন্য গবেষণা উদ্ভাবন। ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির অধীনে আরআইআইজি-র চারটি অগ্রাধিকারের মধ্যে সর্বপ্রথমটি হলো টেকসই জ্বালানির জন্য উপাদান। আপনারা আজকের সিম্পোজিয়ামের মূলসুর আমাদের অভিন্ন জি২০ অগ্রাধিকারসমূহের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেছে নেওয়াতে তা বাস্তবিকভাবে যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ একটি অংশীদারত্বের জন্য সত্যিই একটি ভালো সূচনা করে৷

বন্ধুগণ,

১৩.বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত বৈজ্ঞানিক ধারা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দৃঢ়তার প্রচারণা নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি বিজ্ঞানীসমাজ উভয়েরই একটি যৌথ দায়িত্ব। আমাদের দুই দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী হিসেবে, ভারত ও বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের ব্যাপারে মনযোগী হয়ে তাঁদের হাতেখড়ি করার দায়িত্বও আপনাদের ওপর রয়েছে। আপনারা যত বেশি একে অপরের সঙ্গে জড়িত হবেন, আমাদের তরুণ বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে কাজ করতে এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখতে ততই বেশি উৎসাহিত হবে।

১৪.তাই আজকের সিম্পোজিয়াম উভয় দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী। আমি আশা করি, আমাদের তরুণ বিজ্ঞানীদের মধ্যে সিএসআইআর ও বিসিএসআইআর এবং আমাদের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় এস অ্যান্ড টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতার আরও বেশি সুযোগ তৈরি হবে।

১৫. শেষ করার আগে, আমি পুনর্ব্যক্ত করতে চাই যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি অনন্য ও বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের সম্পর্ক সমগ্র বিশ্বের অন্য যে কোনো সম্পর্ক থেকে ভিন্ন। এটি কৌশলগত অংশীদারত্বের চেয়েও বেশি কিছু। আমরা অভিন্ন ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা, সংস্কৃতি ও গভীর পারস্পরিক সহমর্মিতার মাধ্যমে সংযুক্ত। আমাদের সম্পর্ক আমাদের যৌথ মূল্যবোধ ও আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে রচিত। আমাদের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি একে অপরের সাথে জড়িত – এই অভিন্ন দৃঢ় প্রত্যয়ের ওপর আমাদের সম্পর্ক নির্মিত।

১৬.তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এগুলোর মূলে রয়েছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের যৌথ আত্মত্যাগ। আমি বিশ্বাস করি, এই এস অ্যান্ড টি সহযোগিতাও আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণ ও মঙ্গলকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সংহতির অভিন্ন চেতনায় পরিচালিত হবে।

১৭.    আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি আবারও বিসিএসআইআরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিসিএসআইআর ও সিএসআইআরকে এই যৌথ সিম্পোজিয়াম আয়োজন করার জন্য প্রশংসা করছি এবং তাদের জন্য কার্যকরী ও ফলপ্রসূ পরিণাম কামনা করি!

আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

জয় বাংলা! জয় হিন্দ!

ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চিরজীবি হোক!

(মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩; বিসিএসআইআর, ঢাকা)