মৈত্রী দিবস উপলক্ষে হাই কমিশনারের বক্তব্য 
৬ ডিসেম্বর ২০২১ বিবৃতি ও বক্তৃতা

মৈত্রী দিবস উপলক্ষে হাই কমিশনারের বক্তব্য ৬ ডিসেম্বর ২০২১

৬ ডিসেম্বর ২০২১ মৈত্রী দিবস উপলক্ষে হাই কমিশনারের বক্তব্য

 

মাননীয় স্পিকার মহোদয়া,

মাননীয় বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,

ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ,

 

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতির ৫০ বছর উদযাপনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। এটি একটি  বিশেষ তারিখ, কারণ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় ও বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীর প্রকৃত বিজয়ের দশ দিন আগেই এই স্বীকৃতি এসেছিল।

আজ আমরা মৈত্রী দিবস উদযাপন করছি কারণ এদিন ভারত এবং ভুটান প্রথম দেশ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। দিল্লী এবং ঢাকা ছাড়াও বিশ্বের ১৮টি প্রধান শহরে এই মৈত্রী দিবস উদযাপিত হচ্ছে।

এত বড় আকারে অন্য কোনও দেশের সাথে যৌথভাবে এই ধরনের মাইলফলক উদযাপনের চেষ্টা আগে কোনও দেশ করেনি। কোভিড মহামারীর অব্যাহত চ্যালেঞ্জ এবং একটি জটিল বৈশ্বিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফর এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর মার্চিং কন্টিনজেন্টের  একে অপরের বার্ষিক দিবসের প্যারেডে অংশগ্রহণের মতন বিশেষ ঘটনাগুলোতে বন্ধুত্বের প্রতিফলন ঘটে। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬ ডিসেম্বরকে এখন থেকে মৈত্রী দিবস হিসেবে ঘোষণার করার সিদ্ধান্তেও প্রতিফলিত হয়েছে।

মহামান্য অতিথি ও বন্ধুরা,

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছে। এটি আমাদের আদর্শিক মানচিত্রকেও বদলে দিয়েছে: আপনাদের স্বাধীনতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, অভিন্ন সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং ভাষার এই বন্ধন বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর একসাথে থাকতে না পারার মতন মিথ্যা তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে। আপনাদের মুক্তি সংগ্রামও বর্বরতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ের অনিবার্যতা প্রমাণ করেছিল।

মহামান্যগণ, ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ,

মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানি নিপীড়ন থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের শক্তিশালী বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের অনেক উপাদান ছিল যা ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় নিশ্চিত করেছিল। এর মধ্যে ছিল কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয়; যেসব এলাকায় আঘাতপ্রাপ্ত বাংলাদেশি নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে অভ্যন্তরীন সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যবস্থাপনা; ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং কৌশলগত সামরিক সহযোগিতা।

আমাদের অংশীদারিত্ব এরপরেও অনেক এগিয়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে আপনাদের প্রবাসী সরকার বিজয়ের পর শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন এবং ভারতীয় সেনার দ্রুত প্রত্যাহার করার জন্য আগেই তাদের ভারতীয় সমকক্ষদের সাথে পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। দেশ পুনর্গঠন এবং খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালন সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থাপনা এবং রেলওয়ে ও বন্দর পুনরুদ্ধারের জন্যও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ উদ্বাস্তু দেশে ফিরে যায়, যা ইতিহাসে এক বিরল নজির। ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে প্রায় এক কোটি শরণার্থী তাদের স্বাধীন দেশে ফিরেছিল।

মুক্তিবাহিনীকে সমর্থনকারী ভারতীয় বাহিনীকে স্বাধীনতার তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছিল, এটিও প্রকৃতপক্ষে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। ততদিনে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রক্রিয়া ভালভাবে চলছে এবং বিশ্ব বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশ্নাতীত নেতৃত্বের শক্তিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

মহামান্যগণ, ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ,

আজ থেকে দশ দিন পরে, আমরা সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির ৫০ বছর উদযাপন করব যখন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর প্রতিনিধিত্বকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন খন্দকারের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণপত্রে স্বাক্ষর করেন। স্পষ্টতই বাংলাদেশে দেশব্যাপী আনন্দের সাথে এটি গ্রহণ করা হয়েছিল।

ভারতের কাছেও এটি ছিল দারুণ আনন্দের মুহূর্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মুহূর্তে আমাদের সংসদের  একটি রেকর্ডিং আপনাদের সামনে আনার চেয়ে বেশি আমি আর কিছু করতে পারি না।

আমি আমার সহকর্মীদের সেই অডিও ক্লিপটি এখন আপনার জন্য চালাতে বলছি। [অডিও ক্লিপ]

আগামী ৫০ বছরে, আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি এবং আমাদের ইতিহাসকে একসাথে গড়ে তোলার জন্য আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। বিশেষ করে গত এক দশকে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছি। আজ, আমাদের দেশগুলি রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, উন্নয়নমূলক, সাংস্কৃতিক, নিরাপত্তা এবং এমনকি মানুষে-মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীদার। আমাদের এখন নিশ্চিত করতে হবে যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ইতিহাস যেন বুঝতে পারে। কারণ আজকের তরুণরাই এই অংশীদারিত্বকে অপরিবর্তনীয় করে তুলতে পারবে।

এটি হবে সত্যিকার অর্থে সেই লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী শহীদদের জন্য, যারা এই দেশের জন্য তাদের সর্বস্ব দিয়ে গেছেন। যেমনটা করেছে তাদের ভারতীয় মিত্ররা, যারা আমাদের বন্ধুত্বের নামে আত্মত্যাগ করেছে।

আপনার সময়ের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চিরজীবী হোক।

 

*******