মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারির উদ্বোধনে হাই কমিশনারের বক্তব্য বিবৃতি ও বক্তৃতা

মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারির উদ্বোধনে হাই কমিশনারের বক্তব্য

মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারির উদ্বোধনে হাই কমিশনারের বক্তব্য

 

জনাব আসাদুজ্জামান খান, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,

বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,

ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

১. গুলশানে আমাদের ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি উদ্বোধন করার জন্য আজকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হওয়াটা পরম সৌভাগ্য ও সম্মানের। এই ঐতিহাসিক উপলক্ষ্যটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের স্থায়ী বন্ধনের আরেকটি মাইলফলক-কে চিহ্নিত করে, যার মাধ্যমে আমরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও বিজয়কে স্মরণ করি।

২. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের উভয় দেশের জন্যই অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণের অদম্য চেতনারই প্রতীক নয় বরং সংগ্রাম ও মুক্তির সেই সংকটময় মুহুর্তগুলোয় ভারত যে দৃঢ় সংহতি ও সমর্থন প্রদান করেছিল, তার উদাহরণ এটি। একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের সাক্ষী এই ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এখন আমাদের যৌথ ইতিহাস এবং আমাদের জাতির মধ্যে অটুট সম্পর্কের প্রমাণ হিসাবে বিরাজমান রয়েছে।

৩. আজ আমরা সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই যাঁরা নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, এবং আমরা সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাই যাঁরা স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি আমাদের অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করবে, যা আমাদের দুই দেশের অসাধারণ যাত্রা ও অব্যাহত থাকা অটল বন্ধুত্বের একটি আভাস প্রদান করবে।

৪. এই গ্যালারিটি ঐতিহাসিক সংগ্রামের বৈশিষ্ট্যযুক্ত সাহসিকতা, স্থিতিস্থাপকতা ও সংকল্পকে ধারণ করে স্বাধীনতার জন্য যাঁরা লড়াই করেছিলেন, তাঁদের বীরগাথা প্রদর্শন করবে। যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এমন ঘটনাবলি, সংঘর্ষের সময় সংঘটিত নৃশংসতা, এবং বাংলাদেশের জন্ম অভিমুখে চূড়ান্ত বিজয়কে চিত্রিত করে এমন নিদর্শন, ছবি ও নথিসমূহ এখানে প্রদর্শিত হবে।

৫. এটি অনুমান করা হয় যে নয় মাসব্যাপী যুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং অগণিত ব্যক্তি বাস্তুচ্যুত হয়। গ্যালারিটি যুদ্ধের মানবিক মূল্য ও বাংলাদেশি জনগণের স্থিতিস্থাপকতাকে তুলে ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াইকারীদের আত্মত্যাগের করা স্মরণ করিয়ে দেবে।

৬. বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের অঙ্গীকার ন্যায়বিচারনীতি, গণতন্ত্র ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। এটি ছিল ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতিফলন যা এই দুই দেশকে একত্রে আবদ্ধ করে। এই মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিটি শুধুমাত্র সংগ্রামের সামরিক দিকসমূহকেই নয়, বরং শরণার্থী শিবির স্থাপন এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের ব্যবস্থাসহ ভারত কর্তৃক গৃহীত মানবিক প্রচেষ্টাসমূহকেও প্রদর্শন করবে।

৭. ভারত ও বাংলাদেশের রয়েছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়া অসাধারণ একটি সম্পর্ক। বাণিজ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও মানুষে-মানুষে আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন পরিসরে আমাদের বন্ধন বিস্তৃত। আমরা প্রয়োজনের সময়ে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি, একে অপরকে সমর্থন ও সহায়তা করেছি।

৮. এই গ্যালারির উদ্বোধন আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরেকটি মাইলফলক-কে চিত্রিত করে, যা আমাদের যৌথ ইতিহাসকে সংরক্ষণ ও উদ্‌যাপনের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। এটি আমাদের স্থায়ী অংশীদারত্বের পুনর্নিশ্চিতকরণ এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের শক্তি ও গভীরতার একটি অনুস্মারক।

৯. আমরা মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিটির দ্বার উন্মুক্ত করে সকল দর্শনার্থীকে এই প্রদর্শনীতে নিজেদেরকে গভীরভাবে মগ্ন করার, উদ্ভূত আবেগ গ্রহণ করার, এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণের আত্মত্যাগের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য অনুপ্রাণিত করছি। আসুন আমরা এই গ্যালারিটিকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে মহত্তর বোঝাপড়া, সম্মান ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী ভিত্তি বিনির্মাণে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করি।

১০. পরিশেষে, আসুন আমরা মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অমূল্য বন্ধনের কথা স্মরণ করি।

আপনাদেরকে ধন্যবাদ,

জয় বাংলা, জয় হিন্দ,

ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চিরিজীবী হোক