ভৌগোলিক বিবরণ ভৌগোলিক বিবরণ

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪০৯৬.৭ কিলোমিটার যেটি তার যে কোন প্রতিবেশীর সাথে ভাগ করে নেয়া সীমান্তের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ।পুরো সীমান্তের মধ্যে ২৮৮০.৫ কিলোমিটার হচ্ছে স্থলসীমান্ত আর বাকি ১১১৬.২ কিলোমিটার হচ্ছে জলসীমা। আন্তর্জাতিক এই সীমান্তটি নদী, বন, কৃষিজমি এবং গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে গিয়েছে। এটি কিছু দুর্গম এলাকা যেমন দেশটির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ম্যানগ্রোভ-জলাভূমি এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলেরবনভূমি ও পর্বত অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগকারী ভারতীয় রাজ্যগুলো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম। রাজ্যঅনুযায়ী সীমান্তের দৈর্ঘ্য নিম্নে দেয়া হলো:

রাজ্য

মোট দৈর্ঘ্য (কিলোমিটার)

পশ্চিমবঙ্গ

২২১৬.৭০

আসাম

২৬৩.০০

মেঘালয়

৪৪৩.০০

ত্রিপুরা 

৮৫৬.০০

মিজোরাম

৩১৮.০০

মোট     

৪০৯৬.৭০            


বাংলাদেশে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল এবং ভারতে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে চুক্তিটির খসড়াদুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে অমীমাংসিত থাকা স্থলসীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যাসহ ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি সুরাহা করার পথ উন্মুক্ত করেছে। 

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪টি, এর মধ্যে গঙ্গা (পদ্মা), ব্রহ্মপুত্র (যমুনা) এবং মেঘনা হচ্ছে আন্ত:সীমান্ত নদী। খরা মৌসুমে (১জানুয়ারি- ৩১ মে) গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি করার লক্ষ্যে ভারত এবং বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিটির মাধ্যমে দেশদুটির মধ্যে একটি ৩০-বছর মেয়াদী পানি বন্টন ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। 

ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই ইউনেস্কো কর্র্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সুন্দরবনের অংশীদার, যেটি বিশ্বের টাইডাল হ্যালোফাইটিকম্যানগ্রোভ বনের সর্ববৃহৎ একক এলাকা। ১০০০০ কিলোমিটার এলাকাসমৃদ্ধ সুন্দরবনের ৬০০০ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যে এবং বাকি অংশটিরয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সুন্দরবনের মধ্যে রয়েছে একটি জাতীয় উদ্যান এবং জৈব সংরক্ষিত এলাকা যেটি বাংলার বাঘ সংরক্ষণের জন্য সর্ববৃহৎসংরক্ষণাগারগুলির অন্যতম।  

বাংলার স্থলসীমান্ত চুক্তি ও খসড়া: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থল সীমানা নির্ধারণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে ‘ভারত প্রজাতন্ত্রের সরকার ও গণ প্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি, ১৬ মে ১৯৭৪’ বিষয়ে জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমানা নির্ধারণ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভারত প্রজাতন্ত্র সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিতচুক্তির প্রটোকল’ দেখতে এখানে ক্লিক করুন। 

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আর একটি অনন্য উদাহরণ হচ্ছে তিন বিঘা করিডোর। বিশ্বের কোথাও এমন আরেকটি নজির নেইযেখানে কোন দেশের একটি অংশ তার অপর অংশের সাথে অন্য একটি দেশের করিডোরের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে। এটি হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবংবাংলাদেশ সীমান্তের ১৭৮ মিটার x ৮৫ মিটার পরিমাপের একটি ভূ-খন্ড। করিডোরটি, যেটি দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা (বাংলাদেশ) ছিটমহলগুলোকেবাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডের (পাটগ্রাম থানা) সঙ্গে এবং কুচলিবাড়িকে (ভারত) মেখলিগঞ্জ শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেবন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির একটি সত্যিকারের সংযোগস্থলে পরিণত হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের জনগণ সমানভাবে করিডোরটি ব্যবহার করে, যাপ্রকৃতপক্ষে দুটি দেশের জনগণের বন্ধুতা ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ পরিবেশে একত্রে বসবাস করার একটি মূর্ত প্রতীক।  

****