জনগণ ও ভাষা জনগণ ও ভাষা

জনগণ ভাষা:

অভিন্ন ইতিহাস ও সভ্যতার ভিত্তিতে ভারত ও বাংলাদেশ একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালন করে। বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস হচ্ছে জীবনের বিভিন্ন দিকের একটিসামঞ্জস্যময় সম্মিলনের প্রকাশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বস্তুগত উপাদান এবং মেধাগত বৈশিষ্ট্য বাংলাকে তার অসাধারণ পরিচিতি প্রদান করেছে। শিল্পকলার সকলক্ষেত্রে অর্জনসমূহ যা সময়ের সকল নেতিবাচক উপাদানকে উপেক্ষা করে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে তাকেই বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে অভিহিত করা যেতেপারে এবং এই ঐতিহ্য বিপুলভাবে তার সমৃদ্ধ ভাষা, শিল্পকলা, রন্ধনশৈলী, চলচ্চিত্র এবং বিস্ময়কর স্থাপত্যশিল্পের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে। সাংস্কৃতিকভাবে উর্বর এবংধীশক্তিতে ভরপুর এই অঞ্চল জ্ঞানতাপস ও কীর্তিমান মানুষের জন্ম দিয়েছে। সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে বাংলার মাটিতে বিশেষ কিছু রয়েছে কেননা এই উপমহাদেশেরনোবেল বিজয়ীগণ সকলেই বাংলার মানুষ- হয় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. অমর্ত্য সেন কিংবা ড. মুহম্মদ ইউনুস। বাংলা মাদার তেরেসার কৃতিত্বেরও বৈধ দাবীদার কেননাতিনি তাঁর জীবনের প্রায় পুরোটাই কোলকাতায় কাটিয়েছেন এবং ড. সি.ভি. রমন-এরও যিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিদ্যার অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। 
আরো পড়ুন

ভাষা

সনাতন বাংলার জনগণ বাংলা এবং অন্যান্য ভাষায় কথা বলে যার সঙ্গে বাংলা ভাষার অভূতপূর্ব মিল রয়েছে। সকল ভাষাই পূর্ব ভারতীয় উপমহাদেশের ইন্দো-আর্য ভাষারঅন্তর্ভুক্ত এবং মাগ্্ধী-প্রাকৃত ও সংস্কৃত ভাষা থেকে উন্মেষিত। ভাষা মূলত: এই অঞ্চলের উভয় দেশের মানুষকে একটি অভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।
আরো পড়ুন 

 বাংলার মহান সাহিত্য বিশারদগণ:

ঊনবিংশ শতকের শেষে বাংলা সাহিত্যের আকাশে পঞ্চকবি হিসেবে প্রখ্যাত এমন পাঁচ মহান ব্যক্তিত্বের হাত ধরে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের যুগ শুরু হয়েছিল। বাংলাসাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিমার্জনে এই পঞ্চকবি খুবই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এঁরা হলেন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ডি.এল রায়, অতুল প্রসাদ এবং রজনীকান্ত সেন। বাংলা সাহিত্য ও শিল্পকলায় তাঁদের অবদান অতুলনীয় এবং আজকের দিনেও বিশ্ব জুড়ে সকল বাঙালির কাছে তাঁরা সমাদৃত ওস্মরণীয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় তাঁর জীবনের প্রায় কুড়ি বছর কাটিয়েছেন এবং তাঁর সেরা রচনাগুলির বেশকিছু তিনি বাংলাদেশের পদ্মানদীরতীরে মনোরম পরিবেশে বসে রচনা করেছেন। সত্যি বলতে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ রচনাই কবি বাংলাদেশে অবস্থানকালে রচনা করেছিলেন যে গ্রন্থটি গুরুদেবরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী করেছিল। ১৯১৩ সালে ঠাকুরকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক স্বীকৃতির অনন্যউদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হয়।  
আরো পড়ুন

পোষাক-পরিচ্ছদ

নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক শাড়ি এবং পুরুষদের ধুতি/লুঙ্গি ভারত এবং বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের জনগোষ্ঠি, আবহমানকাল ধরে প্রধান পোষাক হিসেবে পরিধান করে আসছে। অবিভক্ত বাংলার জনগোষ্ঠির মধ্যে ভাষা ও পোষাকের অভিন্নতা এমনই যে তাদের গোত্র ও ভাষার উপরভিত্তি করে দুটি দেশের মানুষের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা যথার্থই কঠিন।

উৎসব/পার্বণ

ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের জনগণ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ব্যাপকহারে পালন করে থাকে। প্রধান প্রধান মুসলিম উৎসবের মধ্যে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, ঈদ-উল-আযহা এবংমুর্হরম, হিন্দু উৎসবের মধ্যে দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা এবং কালী পূজা, খ্রিস্টীয় উৎসবের মধ্যে ক্রিসমাস (বাংলায় বড়দিন হিসেবে অধিক পরিচিত) ভারতীয় এবংবাংলাদেশী উভয় জনগোষ্ঠি দ্বারা বিপুল উৎসাহের সাথে পালিত হয়ে থাকে। এছাড়া, ভারতীয় ও বাংলাদেশী জনগণ আরও কিছু সাধারণ উৎসব পালন করে থাকে পহেলাবৈশাখ (বাংলা নববর্ষ) এবং রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী।

পদ্ম পুরস্কার

এ পর্যন্ত দুজন প্রথিতযশা বাংলাদেশী ব্যক্তিত্ব পদ্ম পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন-

নোয়াখালির গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের শ্রীমতী ঝর্ণা ধারা চৌধুরী জনসেবার জন্য ২০১৩ সালে এবং অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাহিত্য ও শিক্ষাখাতে অবদান রাখায় ২০১৪ সালেপদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ভূতপূর্ব ভারতীয় নাগরিক, ১৯৬০ সাহিত্যে পদ্মভূষণ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

****