মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি কর্তৃক ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত জন্মাষ্টমী উৎসবে হাইকমিশনারের বক্তব্য, ২০ আগস্ট ২০২২ বিবৃতি ও বক্তৃতা

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি কর্তৃক ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত জন্মাষ্টমী উৎসবে হাইকমিশনারের বক্তব্য, ২০ আগস্ট ২০২২

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি কর্তৃক ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত জন্মাষ্টমী উৎসবে হাইকমিশনারের বক্তব্য, ২০ আগস্ট ২০২২

 

নমস্কার

আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের কর্মকর্তাবৃন্দ, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ও প্রিয় ভক্তগণ,

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জন্মাষ্টমী আয়োজনের জন্য আমি মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই।

এবং আমি সবাইকে পবিত্র জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানাই, যা এই বৃষ্টির মাস, ভাদ্রের সাথে সম্পর্কিত। আমার শৈশবে, এটি ছিল একটি প্রিয় উত্সব: ছোটবেলার বিশেষ খাবার ও উৎসবই শুধু নয়, আমার মনে পড়ে ভগবান কৃষ্ণকে উৎসর্গ করা ভক্তিমূলক সঙ্গীতের অনন্য ছোঁয়া এবং সেইসাথে আঙ্গিনা থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত মোহনীয় শিশুর পদচিহ্ন, যা আমার জন্মাষ্টমীকে সংজ্ঞায়িত করেছিল।

বন্ধুগণ,

এই উত্সবটি কেবল হিন্দু সম্প্রদায়কে নয়, এই প্রাচীন ভূখণ্ডের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উদ্‌যাপনে সমস্ত বাংলার মানুষকে যেভাবে একত্রিত করে তা দেখাটা আনন্দদায়ক। এখানকার প্রতিটি উৎসব-যে ধর্মেরই হোক না কেন- সীমান্তের ওপারে ভারতে উৎসবের রঙে তা ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। আমাদের ঐতিহ্য সত্যিই আমাদের জাতিসমূহের মাঝে একটি সুবর্ণ যোগসূত্র। সর্বোপরি, এটা স্বাভাবিক যে আমাদের অনন্য ঐতিহ্যে সকল মানুষ একসঙ্গে সকল উৎসব উদ্‌যাপন করে, কারণ সকল ধর্মের বাণী সার্বজনীন: সমস্ত মানবজাতির জন্য বিশ্বাস, ভালবাসা ও সহযোগিতা; সেইসাথে শান্তি, সুখ এবং ঐক্য। এটি এখনও বাংলাদেশে জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপনে প্রতিফলিত হয়, এতে একজন প্রতিবেশী হিসেবে আমি আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, ‘ধর্ম যার যার - উত্সব সবার’। এই চেতনাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মহান, সর্বব্যাপী ও প্রগতিশীল সংবিধানকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এই চেতনা বাংলাদেশ তথা বিশ্বে দীর্ঘস্থায়ী হোক!

বন্ধুগণ,

ভারত ও বাংলাদেশের মাঝে বিদ্যমান বন্ধন প্রকৃতপক্ষে ট্র্যাজেডি, আত্মত্যাগ এবং এক চরম মানবিক দুর্দশাময় পরিস্থিতিতে ও একটি নৃশংস, গণহত্যাকারী নিপীড়কের সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সাল থেকে যে বন্ধন আমাদের টিকিয়ে রেখেছে তা সেই ভিত্তির ওপরই গড়ে উঠেছে এবং আরও অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। অভিন্ন ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যে সহস্রাব্দের পুরোনো বন্ধন, সেইসাথে সম্প্রীতিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যবোধ এবং বৈচিত্র্য ও সার্বজনীনতার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে আজ আমরা উভয়ই স্বাধীন, সমকক্ষ ও সার্বভৌম জাতি। আমরা এমন জাতি যারা সত্যিকারের বহুত্ববাদী মূল্যবোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত। আমরা উভয়েই উপলব্ধি করি যে জাতীয় অগ্রগতি কেবল ন্যায়পরায়ণতা, সহানুভূতি এবং সকলের জন্য সমান সুযোগের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।

আমাদের অনন্য অংশীদারিত্ব এবং বন্ধুত্বের এই পঞ্চাশ বছরে, আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে বা ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই এই পবিত্র জাতীয় মন্দিরের প্ল্যাটফর্ম থেকে আমাকে স্পষ্টভাবে বলতে দিন:

ক. ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ভিত্তি হল পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আমাদের জনগণের সহভাগিতামূলক সমৃদ্ধি। এই অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার জন্য উভয় পক্ষের সকল প্রচেষ্টা শুধুমাত্র এই বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে যে সেটা উভয় দেশের জনগণকে উপকৃত করবে;

খ. একটি জাতি হিসাবে সম্ভাব্য সকল মিল ও প্রায় ৪১০০ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ে ভারত সমগ্র বাংলাদেশের বন্ধু ছিল, আছে এবং থাকবে। আমাদের বন্ধুত্বের ভবিষ্যত সর্বপ্রথমে এবং সর্বাগ্রে মানুষকে নিয়ে। এবং হ্যাঁ, এটির ভিত্তি সেই সকল মূল্যবোধ ও লক্ষ্যসমূহ যা আপনারা আপনাদের স্বাধীনতার প্রথম বছরগুলিতে নিজেদের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন। সার্বজনীনতা এবং সম্প্রীতির সেই মূল্যবোধের চেতনায় অগ্রগতি সাধন করাটা বাংলাদেশে বসবাসকারী সকলের জন্য সর্বপ্রথমে এবং সর্বাগ্রে আপনাদের একটি নিজস্ব জাতীয় প্রচেষ্টা:

গ. আমাদের মধ্যে যে কোন এক দেশের জন্য পৃথক পৃথকভাবে কোন অগ্রগতি সাধিত হতে পারে না: শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, নিরাপদ প্রতিবেশীভাবাপন্ন একটি পরস্পর-সংযুক্ত উপ-অঞ্চল নিশ্চিত করতে আমাদের প্রয়োজন একে অপরের সহযোগিতা। ভারতে আমরা সকল দেশের সমান অগ্রগতির জন্য এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই কারণেই আমরা সকল মানুষ এবং সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিস্তৃত ও জন-কেন্দ্রিক উন্নয়ন অংশীদারিত্ব তৈরিতে বিনিয়োগ করছি।

ঘ. পরিশেষে, ভারতীয় সকল সরকার এই বন্ধুত্বকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এখানেও সকল দল ও পক্ষের কাছ থেকে একই রকম প্রতিফল পাওয়ার আশা আমরা সবসময় করবো। সমস্ত কিছু নির্বিশেষে, আমার পূর্বসূরিরা সবাই বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য আপনাদের সমগ্র ইতিহাসজুড়ে, বাংলাদেশের সকল মতাদর্শের সাথে একমনে কাজ করেছেন।

বন্ধুগণ,

আমাদের উপমহাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অঞ্চলে পরিণত করে এমন প্রত্যেকটি উৎসবকে ভারতীয় ও বাংলাদেশি জনগণ আগামী বছরগুলোতেও পরিপূর্ণরূপে উদ্‌যাপন করবে এই আশা রইলো।

এবং আমি এটাও আশা করি যে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন দৃষ্টিভঙ্গি এবং আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ মূল্যবোধের প্রতি একনিষ্ঠতা বজায় থাকলে সুখ, বন্ধুত্ব, শান্তি এবং সম্প্রীতির ঐতিহ্যগত চেতনা এখানে কেবল বৃদ্ধিই পাবে।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ

সবাইকে ধন্যবাদ।