‘মোংলা বন্দর প্রকল্পের আপগ্রেডেশন’-এর লক্ষ্যে পিএমসি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মার বক্তব্য বিবৃতি ও বক্তৃতা

‘মোংলা বন্দর প্রকল্পের আপগ্রেডেশন’-এর লক্ষ্যে পিএমসি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মার বক্তব্য

মোংলা বন্দর প্রকল্পের আপগ্রেডেশন’-এর লক্ষ্যে পিএমসি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মার বক্তব্য

(২৬ ডিসেম্বর ২০২২ )

***

মাননীয় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী জনাব খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা

সহকর্মী ও বন্ধুগণ,

আপনাদের সকলকে জানাই অত্যন্ত সুন্দর একটি বিকেলের শুভেচ্ছা!

১. "মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন" প্রকল্পের জন্য প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সি পরিষেবাসমূহের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আজ এখানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

২.         মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন প্রকল্পটি ভারত সরকারের কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিট-এর আওতায় বাংলাদেশ সরকারকে প্রদত্ত ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অন্তর্ভুক্ত ৫৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গৃহীত হতে যাচ্ছে। শুধু প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সি পরিষেবাসমূহের ব্যয় হলো ৯.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৩.         আজকের অনুষ্ঠানটি এই প্রকল্প ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের প্রতি আমাদের দুই সরকারের গুরুত্বের প্রতিফলন। ভারত ও বাংলাদেশ ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা, সংস্কৃতিসহ মানুষে-মানুষে বন্ধনে আবদ্ধ দুটি দেশ। এই মাসেই আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্মরণ করে ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় দিবস এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে ভারতের স্বীকৃতির প্রদানের স্মৃতিতে ৬ ডিসেম্বর মৈত্রী দিবস উদ্‌যাপন করেছি।

৪.এই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিবসগুলো আমাদের অনন্য ও বিশেষ সম্পর্কের স্মরণচিহ্ন যা আমাদের যৌথ ত্যাগের মূলে রয়েছে, যেমনটি সমগ্র বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। সমসাময়িক সময়ে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির সাথে সাথে এই বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়ে চলেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীদের দূরদর্শী নেতৃত্বে দুই দেশ যখন উন্নয়নের পথে হাঁটছে, তখন ১৯৭১ সালের চেতনা আমাদের অংশীদারিত্বকে নির্দেশনা প্রদান করে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

৫.এটা স্পষ্ট যে ভারত ও বাংলাদেশের দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আমাদের মধ্যে গভীর সহযোগিতার নতুন সুযোগ তৈরি করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দ্রুত বিকাশ এই সম্পর্ককে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে এবং এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত যে আমাদের অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি পরস্পরের সাথে জড়িত। বিশেষ করে আমাদের মধ্যে সংযোগের ওপর জোর দিচ্ছি যা আমাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানুষে-মানুষে যোগাযোগকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

৬.তাই এটা স্বাভাবিক যে আজ বাংলাদেশ উন্নয়ন প্রকল্পের মূল্য ও সংখ্যা উভয় দিক থেকেই আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। আমাদের বৈশ্বিক উন্নয়ন সহায়তার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের প্রকল্পসমূহে প্রসারিত। এটি বৃহত্তর প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতির সাক্ষ্য দেয়।

৭.ভারত সরকার আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে প্রায় আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চারটি উচ্চ রেয়াতি লাইন অব ক্রেডিট প্রদান করেছে। এই রেয়াতি ঋণের আওতায় এ পর্যন্ত ৪২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি প্রকল্প ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যমানের প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে। অতিমারির কারণে সৃষ্ট গুরুতর চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রকল্পসমূহের গতি বাড়িয়েছে।

৮.আজ আমরা যে প্রকল্পটির সূচনা করছি তা বাংলাদেশের সাথে আমাদের উন্নয়ন অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে খুলনা ও মোংলা অঞ্চলের গুরুত্ব তুলে ধরে। আমাদের মোট ৭.৮৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেয়াতি লাইন অব ক্রেডিট প্রতিশ্রুতির মধ্যে শুধুমাত্র খুলনা-মোংলা অঞ্চলেই ১.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও, রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টও এই অঞ্চলে ভারত সরকারের কনসেশনাল ফাইন্যান্সিং স্কিমের অধীনে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

৯.‘মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন’ শিপিং/বন্দর সেক্টরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প যা ভারত সকার তার লাইন অব ক্রেডিটের অধীনে অর্থায়ন করছে। মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর যা ব্যবসায়িক কেন্দ্র খুলনার সাথে সংযুক্ত । এই বন্দরের উন্নয়ন শুধু ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেই নয়, ভুটান ও নেপালের সঙ্গেও বাংলাদেশের সামুদ্রিক যোগাযোগকে জোরদার করবে।

১০.খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্প ও খুলনা-দর্শনা রেললাইন প্রকল্প - ভারত এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্যও রেয়াতি অর্থায়ন করছে - যা এই সমগ্র অঞ্চলে সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন সমন্বয় সাধন করবে। এই প্রকল্পসমূহের মাধ্যমে, মোংলা বন্দর বাংলাদেশের একমাত্র রেল সংযোগযুক্ত বন্দরে পরিণত হবে যেখানে দর্শনা ও গেদে পর্যন্ত একটি নিরবিচ্ছিন্ন রেল সংযোগ থাকবে যা এটিকে সত্যিকারের একটি বহুমুখী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে রূপান্তরকারী নানা সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।

১১.এই উপলক্ষে, গুরুত্বপূর্ণ এই সংযোগ প্রকল্পের সকল স্টেইকহোল্ডারদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমি ভারতীয় পরামর্শদাতাগণকে তাঁদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালানোর অনুরোধ করছি যাতে আমরা দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারি।

১২.এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পাওয়ার প্রত্যাশা করি, যাতে আমাদের সম্মিলিত বিনিয়োগ ও প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হতে পারে এবং বৃহত্তর উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করতে পারে।

আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

***