Remarks by High Commissioner at Muktijoddha Scholarship Cheque Distribution Ceremony চলমান ঘটনাবলী

মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তির চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য

logo

ভারতীয় হাই কমিশন

ঢাকা

মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তির চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য

[মূল মিলনায়তন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮]

জনাব মিসবাহ উদ্দীন সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ,

উপাচার্য, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,

সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাগণ,

সিলেট বিভাগীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ,

ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণ,

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ,

শুভ অপরাহ্ন!

মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্পের চেক বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই মূল্যবান সময় ব্যয় করে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য।

সিলেট হযরত শাহজালালের পবিত্র ভূমি। এই সুন্দর সিলেট অঞ্চলে আমি অনেকবার ভ্রমণ করেছি। সিলেটের চা বাগান আমার নিজ শহর দার্জিলিংয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুন্দর মিলনায়তনে আপনাদের সঙ্গে আবারও দেখা করতে পেরে আমি খুবই খুশি।

প্রিয় বন্ধুগণ!

মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দুই দেশের এক পবিত্র বন্ধন। এই মহান জাতির পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় চরম কষ্ট সহ্য করেছেন। বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্ম তাঁদের অবদানের প্রতি চিরঋণী।

ভারত সরকার এই ভূমির বীর পুত্র-কন্যাদের আত্মদানকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্মরণে এবং দেশের একটি উন্নত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অমূল্য অবদানকে সম্মান জানাতে কয়েকটি কল্যাণমূলক উদ্যোগ এবং প্রকল্প হাতে নেয়া করা হয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিম্নরূপ:

(ক) সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা।

(খ) অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে সশস্ত্র বাহিনী হাসপাতালসমূহে বিনামূল্যে চিকিৎসা।

(গ) নতুন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বৃত্তি প্রকল্প।

(ঘ) এসব প্রকল্পের পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড আয়োজিত বিজয় দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক বছর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিনিধিদলকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ভারত সরকার ২০০৬ সালে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্পটি চালু করেছিল এবং ২০১৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দেন। এই প্রকল্পগুলি একত্রিত হলে ভারত সরকারের মোট ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করবে। ভারত সরকার স্নাতক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়নরত মুক্তিযোদ্ধা উত্তরাধিকারীদের শিক্ষা সহায়তা হিসেবে বৃত্তি প্রদান করে। এ বৃত্তি প্রকল্প থেকে ২১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সরাসরি উপকৃত হয়েছে।

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ!

আপনাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে আপনাদের পিতা এবং পিতামহগণ মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ করেছিলেন। তাঁরা তাঁদের প্রচেষ্টায় সফলতা অর্জন করেছেন এবং এখন তাঁদের 'সোনার বাংলা' নির্মাণের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।

প্রিয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ!

আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ভারতের সরকারের ‘ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার’ এবং 'প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা ও ;ডিজিটাল ভারত এর মত কিছু ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প অনুযায়ী এই বৃত্তি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ভারতের সরকারের এই প্রকল্পগুলোর মত পরের বছর হতে বৃত্তির পরিমান শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি হস্তান্তর করা হবে। এই প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য সুবিধাভোগীদের শ্রম লাঘব ও এ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

বন্ধুগণ!

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। গত কয়েক বছরে আমাদের দুই মহান দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের পর থেকে নিম্নবর্ণিত উল্লেখযোগ্য উন্নয়নসমূহ সাধিত হয়েছে:

(১) ছিটমহল সমস্যাসহ দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত স্থল ও সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি।

(২) মহাকাশ, তথ্য প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, সাইবার নিরাপত্তা এবং বেসামরিক পারমাণবিক শক্তির মত উচ্চতর প্রাযুক্তিক ক্ষেত্রসহ ৯০টিরও বেশি চুক্তি সম্পাদন।

(৩) ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২৮.৫% বৃদ্ধি পেয়ে ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত।

(৪) ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার।

(৫) গত বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১১৫% বৃদ্ধি পেয়ে ২৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত।

(৬) ভারতীয় বিনিয়োগ ৩ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি (আসন্ন বিনিয়োগসহ)।

(৭) বর্তমানে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণচুক্তি বাস্তবায়ন।

(৮) ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের দ্বারা ভৈরব ও তিতাস সেতু নির্মাণ, অতিরিক্ত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইনসহ ১৬টি উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পের উদ্বোধন।

(৯) নির্মাণাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প।

(১০) ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০০ বাংলাদেশী কর্মকর্তার ভারতে প্রশিক্ষণ।

(১১) ১৫০০ বাংলাদেশী বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ।

(১২) বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা প্রদান তিনগুণ বৃদ্ধি (২০১৫ সালে ৫ লাখ থেকে ২০১৭ সালে ১৪ লাখে উন্নীত)

(১৩) মুক্তিযোদ্ধা, জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও মহিলা আবেদনকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা।

(১৪) ২০১৭ সালে ঢাকা-খুলনা-কলকাতা বাস সার্ভিস ও খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস চালু।

(১৫) ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস-এর প্রান্তিক কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন সেবা।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের দু’দেশের সম্পর্কের বর্তমান সময়কে ‘সোনালী অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন।

ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে।

এর আগে এই সপ্তাহের ১০ সেপ্টেম্বর, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় যৌথভাবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর বিভাগের রেলপথের পুনর্বাসনের উদ্বোধন করেন। এই রেলপথের পুনঃস্থাপন আসামের করিমগঞ্জ জেলার সঙ্গে এবং ভারতের অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে সরাসরি সংযুক্ত করবে।

প্রিয় বন্ধুগণ,

আমি খুব খুশি যে, এ বছর আমরা সিলেটে আমাদের নতুন সহকারী হাই কমিশন অফিস চালু করেছি।

আমাদের নতুন সহকারী হাই কমিশনার আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

আমাদের নতুন অফিস সিলেটের জনগণের জন্য দ্রুত ভিসা প্রদানে সহায়তা করবে।

এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও সিলেটের মধ্যে পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে।

সিলেট বিভাগ ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রবেশপথ।

বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির উন্নয়নে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী একে অপরের পরিপূরক হতে পারে।

সুধীবৃন্দ,

বক্তব্য শেষ করার আগে, আমি বৃত্তিপ্রাপ্তদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তাদের সফল শিক্ষাজীবন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করছি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং মঞ্চে উপবিষ্ট বিশিষ্টজনদের ধন্যবাদ জানাই তাঁদের উপস্থিতির জন্য। এই অনুষ্ঠানে আপনাদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যসমূহ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ক্যাম্পাসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য আমি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

ধন্যবাদ!

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দীর্ঘজীবী হোক।

জয় বাংলা!

জয় হিন্দ!

****